এ দেশের শোবিজের শোক যেন কাটছেই না। একের পর এক গুণী মানুষেরা চলে যাচ্ছেন সমৃদ্ধ আঙিনাকে অসহায় করে দিয়ে। চলতি বছর সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ, অভিনেতা টেলি সামাদের পর গত ৭ মে চলে গেলেন কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী।
তার ভিড়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে লাইফসাপোর্টে রয়েছেন বরেণ্য অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। রাজধানীর ডেমরায় অবস্থিত আজগর আলী হাসপাতালে চলছে তার চিকিৎসা। এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার একুশে পদকজয়ী এই অভিনেতার মৃত্যু গুজব ছড়িয়েছে।
রোজ নিয়ম করে দুইবেলা এই বরেণ্য অভিনেতার মৃত্যু গুজব ছড়ানো হচ্ছে ফেসবুকে! অতি উৎসাহী কেউ কেউ এ গুজব ছড়াচ্ছেন। আর যাচাই-বাছাই না করেই সেগুলো শেয়ার দেয়া হচ্ছে পানির স্রোতে। দুঃখজনক ব্যাপার হলো মিডিয়ার অনেক লোকও এ গুজবে আক্রান্ত!
এদিকে বারবার মৃত্যু গুজব ছড়ানোতে বিরক্ত এটিএম শামসুজ্জামানের পরিবার। এই অভিনেতার ছোট ভাই সালেহ জামান সেলিম জাগো নিউজকে শনিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে নিশ্চিত করেন, বেঁচে আছেন এটিএম শামসুজ্জামান। তার চিকিৎসা চলছে। শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে একটু ভালো। আজ (শনিবার) দুপুরে উনার লাইফসাপোর্ট খোলে দেয়া হয়।
এ প্রতিবেদকের কল রিসিভ করেই তিনি বলেন, বুঝেছি একটু আগেই ভাইয়ের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়েছে। সেইটা নিশ্চিত হতে কল দিয়েছেন। আল্লাহর রহমতে ভাই ভালো আছেন। আমরা খুবই বিরক্ত। একটা মানুষকে কেন মরার আগেই বারবার মেরে ফেলা হচ্ছে! মানুষের মৃত্যুর নিউজ ছড়িয়ে কী আনন্দ পায় তারা? আর এসব খবর পায়ই বা কোথায়! আপনারা সবাইকে জানিয়ে দিন, তিনি ভালো আছেন। আল্লাহর দোহাই লাগে পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত না হয়ে যেন নিউজ না হয় বা মৃত্যুর গুজব ছড়ানো না হয়।
তিনি আরও বলেন, উনার বাঁচা-মরা আল্লাহর হাতে। আমাদের হাতে সুযোগ আছে তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা করানোর। খুব ভালো চিকিৎসা চলছে তার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ থেকেও তার খোঁজ-খবর রাখতে বিশিষ্টজনদের নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন। তিনি দেশে ফিরলে ভাইকে দেশের বাইরে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আপাতত সবার দোয়া চাই আমরা।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছেন এটিএম শামসুজ্জামান। হঠাৎ অসুস্থবোধ করায় গত ২৬ এপ্রিল দিবাগত রাতে রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এই অভিনেতাকে। ওইদিন এটিএম শামসুজ্জামানকে স্যালাইন দেয়া হয়। তখন হঠাৎ করে তার মলত্যাগে জটিলতা দেখা দেয়।
এ জন্য গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে জরুরি ভিত্তিতে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার সফলভাবে শেষ হয় তার। ২৮ এপ্রিল সকালে তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু ৩০ এপ্রিল তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় এদিন বেলা ৩টার দিকে তাকে লাইফসাপোর্টে রাখা হয়।
এরপর অবস্থা কিছুটা উন্নতি হওয়ায় গত ৩ মে শুক্রবার সকালে তার লাইফসাপোর্ট খুলে দেয়া হয়। রাখা হয় নিবিড় পর্যবেক্ষণে। শুক্রবার দুপুরে হাসপাতালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এটিএম শামসুজ্জামানের চিকিৎসা তত্ত্বাবধানকারী ডা. রবিউল আলীম এই তথ্যই নিশ্চিত করেছিলেন। কিন্তু আবারও শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বর্তমানে তাকে ফের লাইফসাপোর্টে নেয়া হয়, যা আজ খুলে ফেলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এটিএম শামসুজ্জামান অভিনয়ে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ২০১৫ সালে পান রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদক।
অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি একজন প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার এবং নির্মাতাও।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ জাগোনিউজ২৪