দেশের অন্যতম ফল ও ফসল আবাদ এলাকা হিসেবে পরিচিত পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পদ্মা নদী তীরবর্তী বেশকিছু অঞ্চল। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে সেসব এলাকার লিচুসহ অন্যান্য ফসলি জমি।
আবাদ মৌসুমের শেষ প্রান্তে এসে বাগান নষ্ট হয়ে পড়ায় সর্বশান্ত হতে বসেছেন জেলার মৌসুমী ফল চাষিরা। ঝরে পড়া লিচু পানির দামে বিক্রি হচ্ছে মহাসড়কের পাশে।
এই অঞ্চলের চাষকৃত ফল ও নানা প্রজাতির সবজি স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা পূরণ করে থাকে। আম্পানের প্রভাবে জেলায় লিচুসহ অন্যান্য ফসলের প্রায় দুইশো কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করছেন কৃষি বিভাগ। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা ফল চাষে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকারি প্রণোদনার জন্য আবেদন জানিয়েছেন।
চলতি মৌসুমে আবহাওয়া ভালো থাকায় লিচুসহ অন্যান্য ফসলের বেশ ভালো ফলন হয়েছিলো। আবাদ মৌসুমের প্রায় শেষ প্রান্তে এসে বুধবার (২০ মে) মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে ঈশ্বরদী উপজেলার লিচুর বাগানগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বেশিরভাগ লিচু গাছের ডাল ভেঙে লিচু ঝড়ে পড়েছে। গাছে যেগুলো আছে সেগুলোও ঝড়ের প্রভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। ফলে এ উপজেলার লিচু চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। যে সব চাষিরা মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে দাদন নিয়ে লিচু আবাদ করেছিলেন তারা জানেন না কীভাবে মহাজনের সেই টাকা পরিশোধ করবেন।
এদিকে ঝরে পড়া লিচু পানির দামে বিক্রি হচ্ছে ঈশ্বরদী-কুষ্টিয়া মহাসড়কের উপর। একশো লিচু মাত্র ৩০ থেকে ৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
পাবনা ও ঈশ্বরদী উপজেলার সোলিমপুর, সাহাপুর, পাকশী, রূপপুর, আওতাপাড়া, বাঁশেরবাদা, দাপুনিয়াসহ ৮টি ইউনিয়নে লিচুর ব্যাপক আবাদ হয়ে থাকে। এছাড়া জেলার পুষ্পপাড়া, জালালপুর, একদন্ততেও লিচুর আবাদ হয়।
জেলায় চলতি মৌসুমে ৪ হাজার ৬শ হেক্টর জমিতে ৪৬ হাজার মেট্রিকটন লিচুর আবাদ হয়েছিলো। এর মধ্যে পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে চলতি মৌসুমে জেলায় আম্পানের প্রভাবে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ফল ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। আর এর মধ্যে সবচাইতে বেশি ক্ষতি হয়েছে লিচুর।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মৌসুমী ফল ব্যাপারীরা জানান, মহামারি করোনার কারণে হাট-বাজারে জনসমাগম না থাকায় তাদের বেচা বিক্রি এমনিতেই কমে গেছে। তার ওপরে ঝড়ের তাণ্ডবে ফলের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তাতে প্রান্তিক চাষিসহ মধ্যস্থতাকারী ফলের ব্যবসায়ী যারা রয়েছেন তাদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা করা হলে তবেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা।
জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজহার আলী জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পাবনা অঞ্চলের লিচুসহ সব ধরনের কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এ ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দুইশো কোটি টাকার কম নয়। তবে সবচাইতে বেশি ক্ষতি হয়েছে লিচুর। উল্লেখযোগ্য অংশের লিচু নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বাগান ও কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পাওয়া গেলে তা কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।