রাজশাহী বিভাগে হু হু করে বাড়ছে প্রাণঘাতী করোনার সংক্রমণ। গত ১৪ এপ্রিল থেকে রাজশাহী লকডাউন থাকলেও কার্যত এর সুফল মিলছে না। কারণ প্রতিদিনই ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের সন্দেহভাজন মানুষ নানান উপায়ে জেলায় ঢুকছেই।
রাজশাহীর আশপাশে থাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জসহ অন্যান্য জেলাগুলোরও প্রায় একই অবস্থা। এতে প্রায় এক মাসেই রাজশাহী বিভাগে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৭ জনে। যতই দিন যাচ্ছে করোনা পরিস্থিতির ততই যেন অবনতি ঘটছে। রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় প্রতিদিন বাড়ছে সংক্রমিতের সংখ্যা।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের করোনা ল্যাব ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার (৮ মে) পর্যন্ত বিভাগের সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে নওগাঁয়। একদিনে চারজন বেড়ে এ জেলায় বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা ৬০ জন। আক্রান্তের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা জয়পুরহাটে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ৩৮ জন। আর বগুড়ায় একদিনে পাঁচজন বেড়ে আক্রান্ত দাঁড়িয়েছে ৩০ জনে। এছাড়া এখন পর্যন্ত রাজশাহীতে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ১৭ জন, পাবনায় ১৩ জন, নাটোরে ১০ এবং সিরাজগঞ্জে তিনজন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ১৬ জন।
শুক্রবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে শনাক্ত দুইজনের মধ্যে একজন ১২ বছরে শিশু অপর জন তার দাদী। তারা রামেকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার মা ও ছেলে। ওই কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। কিন্তু তাদের ফল নেগেটিভ এসেছে। এর পরও শুক্রবার থেকে ওই কর্মকর্তাকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তিনি রাজশাহী থাকলেও তার পরিবার থাকেন চাঁপাইনবাবগঞ্জে। প্রতি সপ্তাহে বাড়ি যেতেন। এজন্য তাকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।
এদিকে, রাজশাহী বিভাগে বর্তমানে দু’টি ল্যাবে কোভিড-১৯ শনাক্তে পরীক্ষা হচ্ছে। এর একটি হলো রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ। অপরটি বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজে। এ দুই ল্যাবে প্রতিদিন ৯৪ জন করে মোট ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর বাইরে অতিরিক্ত নমুনাগুলো ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য মতে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ১৮৭ জনের মধ্যে রাজশাহী ও নাটোরে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। আর সুস্থ হয়েছেন আটজন। এর মধ্যে বগুড়ায় সাতজন ও পাবনায় একজন। এছাড়া বিভাগের আট জেলায় আইসোলেশনে আছেন ২১১ জন। আর বাকি সন্দেহভাজনরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন।
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. গোপেন্দ্র নাথ আচার্য্য বলেন, করোনা পরিস্থিতি দিনে দিনে পাল্টাতে শুরু করায় তারা সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছেন। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ও বগুড়ার ল্যাবে বেশি বেশি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ বেশি রোগী শনাক্ত করা গেলে পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণ করা যাবে। তবে সঙ্কটাপন্ন পরিস্থিতি এড়াতে এবং জেলা ও বিভাগে সংক্রমণ ছড়িয়ে পরা রোধে সবাইকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজ