বর্তমানে দেশের সবচেয়ে আলোচিত সমস্যা ডেঙ্গু। অতীতে শুধু ঢাকাতেই এ রোগের বিস্তার থাকলেও, সম্প্রতি তা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। আর এতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন দেশসেরা রাজশাহী কলেজের অপরিচ্ছন্ন হোস্টেলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
দেশসেরা রাজশাহী কলেজের ক্যাম্পাস পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হলেও এর আবাসিক হলগুলোর প্রতি নজর নেই প্রশাসনের। ফলে দীর্ঘদিন ধরে আগাছা, আবর্জনায় বেহাল অবস্থা হোস্টেলগুলোর। ফলে ডেঙ্গ আতঙ্ক বাসা বাঁধছে শিক্ষার্থীদের মনে।
উপরন্তু, হোস্টেলের পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য বললেও কম বলা হবে। পুরোনো ৭টি ও নতুন একটি ভবন মিলিয়ে মোট ৮টি ভবনের জন্য পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সংখ্যা মাত্র ২ জন। যদিও অলিখিতভাবে আরো কয়েকজন কর্মী এখানে কাজ করেন। তারপরেও সেটি যথার্থ নয় বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা।
ফলে ডেঙ্গু মোকাবেলায় স্ব-উদ্যোগে হোস্টেল অভ্যন্তরের ড্রেনসহ অপ্রয়োজনীয় আগাছা পরিষ্কার করতে নেমেছে আবাসিক শিক্ষার্থীরা। সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন ভবনের (সি ব্লক) পেছনের সি-কোয়াটার থেকে এ পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, কলেজের মুসলিম হোস্টেলের ৮টি আবাসিক ভবন, হিন্দু হোস্টেলের আগাছায় পরিপূর্ণ। এছাড়াও সি ব্লকের সামনে ময়লা আবর্জনার স্তুপও দেখা যায়। ময়লা জমেছে পানির ড্রেনেও। এছাড়াও অস্বাস্থ্যকর টয়লেটের কারনে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে বাস করছে শিক্ষার্থীরা।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানকালে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি হোস্টেল কর্তৃপক্ষের করার কথা থাকলেও তারা এ কাজে হাত দেয় না বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।
তবে এসকল বিষয়ে কথা বলতে ভয় পান শিক্ষার্থীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, ডেঙ্গু মোকাবেলার জন্য আমরা আজকে এই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় নেমেছি। হোস্টেলের প্রায় সব ব্লকের সামনে ময়লা আর্বজনার স্তুপ ও অপ্রয়োজনীয় আগাছা জন্মেছে। হোস্টেল কর্তৃপক্ষ পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে নজর না দেয়ায় আমরা পরিস্কার করতে নেমেছি।
পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়মিত আসে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগের সুরে বলেন, হোস্টেলে দুই-একজন পরিচ্ছন্ন কর্মীকে দেখা যায়। তবে বছর-ছয় মাস পর তারা আসে পরিস্কার করতে।
আরেক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, মশার উৎপাতে হোস্টেলে দিনের বেলাতেও মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হয়। সন্ধ্যা হলেই যেন মনে হয় মশার দখলে কলেজ হোস্টেল। এতে লেখা-পড়াতে মনযোগ দিতে বাঁধাগ্রস্থ হই আমরা। চারিদিক অপ্রয়োজনীয় জঙ্গলে ছেয়ে গেছে। পরিস্কারের দিকে নজর নেয় হোস্টেল কর্তৃপক্ষের। এছাড়াও কিছুদিন আগে বাথরুমে সাপও দেখা গেছে বলে জানান তিনি।
হোস্টেল কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য মতে, পুরো মুসলিম কলেজ হোস্টেলের ৮টি ভবন ও কিছু কোয়ার্টার ভবনের জন্য পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কাজ করেন ইয়ার আলী ও রাজু নামের দুই জন। যদিও আরো কয়েকজন অলিখিতভাবে রয়েছেন।
হোস্টেল পরিচ্ছন্নতাকর্মী ইয়ার আলী ও রাজু জানান, আমরা নিয়মিত কাজ করি। দুই জনে সময় ভাগ করে করি। কিন্তু সেই হিসেবে যা বেতন পাই তা দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব হয় না।
এ সকল বিষয়ে রাজশাহী কলেজ মুসলিম হোস্টেলের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক সহযোগী অধ্যাপক হুমায়ুন রেজা বলেন, আমরা বেশ কিছু জায়গায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়েছি। আগামীতে একটা কমিটি গঠন করে আমরা এ অভিযান অব্যাহত রাখব।
এ সময় জনবল সংকটসহ বেশ কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরে তত্ত্বাবধায়ক জানান, হোস্টেল পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেতনও দেওয়া হয় সীমিত। এ ছাড়া ভবনগুলোও অনেক পুরাতন সংস্কার করতে গেলে ভেঙে যায়। আমরা এসকল বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষকে অবগত করেছি।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ Daily Sunshine